নিজস্ব প্রতিবেদক: কখনও কখনও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যা শুধু দুই দেশের নয়—সমগ্র বিশ্বের চোখে চমক জাগায়। ঠিক এমন এক মুহূর্ত সামনে আনতে চলেছে আজকের দিন।
দীর্ঘদিন ধরে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে একসময় সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল যে দেশ, সেই মৌরিতানিয়া এখন আবারও আলোচনায়। কারণ আজ, ৯ জুলাই, মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওউলদ গাজোয়ানি বসতে যাচ্ছেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক চৌকস বৈঠকে।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ইউএস-আফ্রিকা সম্মেলনের ফাঁকে।
❝অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা বৈঠক❞
এটা শুধুই কি এক সম্মেলনের আড়ালে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নাকি সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সূক্ষ্ম শুরু? অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, এই বৈঠকের আয়োজন ও সমন্বয়ে পর্দার আড়ালে সক্রিয় ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের একাংশ।
স্মরণযোগ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্সির সময় ইসরায়েলের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া ও মৌরিতানিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু সেই প্রয়াস যেন এবার আবার ফিরে এসেছে এক নতুন মোড় নিয়ে।
❝আব্রাহাম চুক্তির ছায়া বিস্তার❞
২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি ছিল ইসরায়েলি কূটনীতির এক ঐতিহাসিক ধাপ—সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদানের মতো মুসলিম দেশদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল তারা।
এখন ইসরায়েল নতুন বন্ধু খুঁজছে—আর সে খোঁজে এবার তাদের নজর আফ্রিকার সুন্নি মুসলিম দেশ মৌরিতানিয়ার দিকে।
❝সম্পর্কের ইতিহাস—ছিন্ন থেকে সম্ভাবনায়❞
একসময় এই মৌরিতানিয়া–ইসরায়েল সম্পর্ক ছিল বাস্তবতার ছায়ায় গড়া। ১৯৯৯ সালে সম্পর্ক স্থাপনের পর তা টিকে ছিল প্রায় এক দশক।
কিন্তু ২০০৮-০৯ সালের গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করে মৌরিতানিয়া।
তবে সময় বদলায়। আগ্রহও বদলায়।
আজকের এই বৈঠক ইঙ্গিত দিচ্ছে—ইসরায়েল ফের চাইছে পুরনো বন্ধুত্ব ফিরিয়ে আনতে। আর মৌরিতানিয়াও হয়তো নতুন বাস্তবতার আলোতে ভাবছে তার কূটনৈতিক কৌশল পুনর্গঠনের কথা।
বিশ্লেষণ: বন্ধুত্ব না কৌশল?
এই বৈঠক শুধুই কি রাজনৈতিক সৌজন্য, না কি একটি সুপরিকল্পিত “ডিপ্লোম্যাটিক টেস্ট রানের” অংশ?
বিশ্ব রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে ও আফ্রিকায় নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করতে ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
আর মৌরিতানিয়ার এই বৈঠক অংশগ্রহণ হয়তো তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও, কথোপকথনের দরজা খোলা থাকলেই সম্ভাবনা থাকে।
আজকের বৈঠক শুধু দুই রাষ্ট্রনেতার নয়, এটি হতে পারে পুরো অঞ্চলের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা—যেখানে প্রশ্ন থাকবে, বিতর্ক থাকবে, কিন্তু আলোচনা থেমে থাকবে না।
মো: জামাল/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট গাজোয়ানি
- আপলোড সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১১:২৯:৫৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৭-২০২৫ ১১:২৯:৫৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ